প্রত্যয় ডেস্ক, পশ্চিমবঙ্গ বিশেষ সংবাদদাতাঃ চমকে ওঠার মতো ঘটনাই বটে। যেখানে তৃণমূল কংগ্রেস ভারতের স্বাধীনতা দিবস পালন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি লাগিয়ে, (যে ঘটনায় একাধিকার প্রশ্ন উঠেছিল, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা কী ছিল, কিন্তু কোনও বিতর্ককেই পাত্তা দেয়নি পশ্চিমবাংলার শাসক দল,) সেই দলেরই কোচবিহারের বিধায়ক কিনা নিজের কার্যালয় থেকে সরিয়ে দিলেন স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি!
তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী আগেই দলের সাংগঠনিক পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, কোচবিহারের ধর্মসভায় নিজের কার্যালয় থেকে এবার দলনেত্রীর ছবি সরিয়ে দিয়ে লাগিয়েছেন স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ছবি। আর কার্যালয়ের সামনে লাগানো নতুন ব্যানারে লেখা হয়েছে ‘কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির গোস্বামীর কার্যালয়’। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিষয়টি যে তৃণমূল নেতৃত্ব জানতে পারেনি বা দলনেত্রীর কানে যায়নি, তা হতে পারে না। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, মমতার দলে থেকে একজন বিধায়কের এই স্পর্ধা হয় কী করে? উত্তরও পাওয়া যাচ্ছে কোনও কোনও রাজনৈতিক বিশ্লেষকের কাছ থেকে। তাঁদের মতে, ছ–সাত মাস পরেই বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপিও এখন ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলছে। তাই এই মুহূর্তে বিধায়কের স্পর্ধাকে নীরবে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে দল। কারণ, এখন যদি তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়, তা হলে হয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে ওই কেন্দ্রে। ফায়দা তুলতে পারে বিজেপি।
কিন্তু দলের এই মৌনতাকে নিজের প্রভাব বৃদ্ধি বলেই হয়তো ধরে নিয়েছেন সেই বিধায়ক। এবার তিনি মুখ খুলেছেন স্বয়ং প্রশান্ত কিশোর বা পিকে–র বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য, প্রশান্ত কিশোরকে তৃণমূলের তরফে রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবে স্বয়ং দলনেত্রী নিয়োগ করেছেন। সেই প্রশান্ত কিশোরই এখন দলের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। কে কোথায় প্রার্থী হবেন বা হবেন না, সে সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং সে কথা দলনেত্রীকে জানিয়েও দিচ্ছেন। দলের অনেক নেতাই বিষয়টি নিয়ে পিকে–র টিমের ওপর ক্ষুব্ধ। কিন্তু প্রকাশ্যে সে ভাবে কেউই মুখ খুলতে সাহস করছেন না। কিন্তু এবার সেই ব্যতিক্রমটাই ঘটিয়ে দিয়েছেন এই বিধায়ক মিহির। শনিবার সাংবাদিকদের কাছে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন পিকে–র সংস্থা আইপ্যাকের বিরুদ্ধে। পরিষ্কার বললেন, ‘কোনও ঠিকাদারি সংস্থা রাজনৈতিক দলকে পরিচালনা করতে পারে না। যদি করে, তা হলে সেই দলের বিপদে পড়ার আশঙ্কা প্রবল হয়ে থাকে।’ আরও বলেছেন, ‘দলের সংগঠন চলে নেতা ও কর্মীদের মিলিত প্রচেষ্টায়। ঠিকাদারি সংস্থার মাইনে করা লোকদের নির্দেশ মেনে দলের কর্মীদের কাজ করতে হলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছু হতে পারে না।’
তা হলে কি তিনি পিকে–র সংস্থার জন্য শাসক দল তৃণমূলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন? এই প্রশ্নের সরাসরি কোনও উত্তর তিনি দেননি। তবে যে–টুকু কথা তিনি বলে দিয়েছেন, তাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে নিজের দলের সম্বন্ধে তাঁর বর্তমান মনোভাবের কথা। আর তাঁর বলা সেই কথা নিয়েই কোচবিহার জেলার রাজনৈতিক মহলে শোরোগোল পড়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি তিনি ধীরে ধীরে বিজেপির দিকেই পা বাড়াচ্ছেন? অবশ্য এই জল্পনা সম্পর্কে পরিষ্কার কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু তৃণমূলেরই উত্তরবাংলার নেতাদের একাংশের বক্তব্য, গোপনে নাকি বিজেপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে গিয়েছেন এই বিধায়ক। এখন সম্ভবত বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পথে। তাই দলের বিরুদ্ধে এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। এদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে তিনি কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের কর্মী এবং নেতাদের একাংশকে নিয়ে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে বা সিদ্ধান্ত হয়েছে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছুই বলেননি তিনি।
কিন্তু কয়েকদিন আগেই এই বিক্ষুব্ধ বিধায়ক কলকাতায় এসেছিলেন। কলকাতায় দলের শীর্ষনেতাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের মনোভাব বুঝে গিয়েছেন। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, তার পর তাঁর এই বক্তব্য রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ। রবিবার দলের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। কিন্তু সেই বৈঠকে বিধায়ক হিসেবে মিহির গোস্বামী যাবেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়। যদিও বিধায়ক নিজেই জানালেন, বিনয়বাবু তাঁকে ফোন করেছিলেন। তিনি তাঁকে জানিয়েছেন, বৈঠকে তিনি যাবেন কিনা, তা এখনও সিদ্ধান্ত নেননি। এর আগে ২ অক্টোবর তিনি দলের সাংগঠনিক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।